আমি আর আমার বন্ধুরা ৩ (রম্য)

 

[আমার এবং আমার বন্ধুদের বিভিন্ন মজার সব ঘটনা নিয়ে নতুন একটা সিরিজ লিখার পরিকল্পনা আমার অনেক দিন যাবৎ ছিলো।তাই সেই সব ঘটনার আলোকে লিখতে শুরু করলাম আমি আর আমার বন্ধুরা নামক এই সিরিজ।এর সকল ঘটনা ৮৮% সত্য এবং গ্যারান্টেড।

যদি দূর্ভাগ্যবশত কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাথে মিল পাওয়া যায় অথবা মিলে যায় তাহলে দয়াকরে আমার প্রতি short code এ MC, BC ,SMC বা কামিনা,আবুইল্যা,বোকচোদ,মুড়ি খা ইত্যাদি word use করবেন না। ]

 

 

 

বেশ কিছু বছর আগের ঘটনা।আমি তখন এস এস সি পরীক্ষার্থী।টেষ্ট পরীক্ষার পরে স্কুলে বিশেষ কোচিং ক্লাস চলছিলো।সবাই আমরা তখন দুই বছরের পড়ালেখা ঝালাই করায় ব্যাস্ত।যেভাবেই হোক প্লাস আনতে হবে। প্রায় সময়ই বন্ধুদের বাসায় হামলা করে তাদের সংগ্রীহীত সাজেশন্স উদ্ধার করায় ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছিলাম।ঢাকার সব নামিদামী স্কুলের সব নামিদামী শিক্ষকগনের সাজেশন্স তখন আমার হাতে। সাজেশন্স সংগ্রাহক হিসাবে আমার বিশেষ খ্যাতি।মাঝে মাঝে মেয়েরা আমকে ডেকে বিভিন্ন ভংঙ্গিমা করে আবদার করে বসতো।প্রথমে না দেবার ভান করলেও পরে দিয়ে দিতাম।এভাবে মেয়েদের আবদার রক্ষা করতে করতে আমি ক্লান্ত।মেয়েদের আবার আরেকটা আবদার ছিলো।সেটা হলো যে,সে আমার কাছ থেকে সাজেশন্স নিয়েছে সেইটা যেন আমি তার বান্ধবীদের না বলি।এভাবেই ব্যাস্ত সময় কাটছিলো আমার।

 

 

যাইহোক, মূল ঘটনাটা আমার এক বন্ধুকে নিয়ে।আমার সেই বিশিষ্ঠ বন্ধুর নাম ছিলো মামুন।ওর নামটা আমার কাছে একটু আজিব লাগতো।নামের প্রথম অক্ষরটা বাদ দিলে হয় "মুন"যা মেয়েদের নাম,আর শেষের অক্ষরটা বাদ দিলে হয় "মামু" যার অনেক রকমের অর্থ রয়েছে।বর্তমানে আমার সেই বন্ধুটি একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ালিখা করছে।

 

 

বরাবরের মত প্রতিটি স্কুলের প্রতিটি ক্লাসেই দুই একটা ইয়া মোটা হাতি টাইপের মেয়ে থাকে।আমাদের ক্লাসের প্রভাতী শাখায়ও এর ব্যতিক্রম ছিলো না।মেয়েটির নাম ছিলো সুনাম।২০০৪ সালের সুনামীর পরে তার নাম হয়ে যায় সুনামী।স্কুলে বন্ধুদের আড্ডার মাঝে হঠাৎ যদি কেউ বলে উঠতো সুনামী আসছে,তবে মহূর্তের মধ্যেই সব উধাউ।আমরা সুনামীর ভয়ে সবসময় আতংকিত থাকতাম।আর মেয়েটাও খুবই দাপটের সংঙ্গে নিজেকে জাহির করতো।

সুনামীর অত্যাচার চরমে উঠলে এই বিষয় নিয়ে নানান মতবাদের আর তর্ক বিতর্ক শুরু হয়।একপর্যায়ে সুনামী নির্মুল কমিটিও গঠন করা হয়।কিন্তু সুনামীর বিরুদ্ধে কথা বলার মত বীরপুরুষ স্কুলে একটিও ছিলোনা বিধায় সেই কমিটি মাঠেই মারা যায়।

 

 

যাইহোক,মূল ঘটনায় ফিরে যাই।টেষ্ট পরীক্ষার পরে তখন আমাদের স্কুলে বিশেষ কোচিং ক্লাশ উপলক্ষে দিবা ও প্রভাতী শাখা একসাথে করা হয়েছে।এতে করে স্কুলের একশ্রেনীর ছাত্রসমাজ ভীষনই খুশি হয়েছিলো।কিন্তু আমার বেজায় মন খারাপ হয়েছিলো।কারন,আমি জানতাম স্কুলের শুক্কুর আলী প্রধানীয়া স্যার নির্ঘাত আমাকে মেয়েদের সামনে কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রাখবে।তাও ছোট খাটো কোন কারনে।অবশ্য ভীষন আদর করতেন বলেই বাইরে থেকে তিনি আমার প্রতি একটু রুদ্র থাকতেন।

 

 

কোচিং চলাকালীন মাঝামঝি সময়ের একটি মেঘলা দিন ছিলো সেদিন।সকাল আট টায় আমাদের ক্লাস শুরু হয়।দশটার দিকে দুই ক্লাশ পরে টিফিন ব্রেক দিলে আমরা সবাই ক্লাশ থেকে বেরিয়ে যাই।মেয়েরা উত্তর দিকের দালানের সামনে আর ছেলেরা দক্ষিন দিকের দালানের সামনে আড্ডা দিচ্ছিলাম।হঠাৎ করেই দেখা গেলো আমাদের দিকে প্রচন্ড বেগে সুনামী ধেয়ে আসছে।সুনামীর ভয়ে আমাদের সাথে আড্ডারত দূর্বল চিত্তের কয়েকজন বালক আগে ভাগে পাশ কাটলো।আর সুনামী কাছে আসতেই আমরা যারা অবশিষ্ঠ ছিলাম সকলেরই ভয়ে বুক দুর দুর করছে নতুবা পায়ে পা বারি খাচ্ছে।অবশেষে সুনামী আমাদের মাঝে এসে তার তান্ডব নৃত্য শুরু করলো।ঘটনাটা ছিলো এমন,

 

সুনামী আমাদের আড্ডার মাঝে এসেই আমার সেই জনৈক বন্ধু মামুনের সামনে দারালো।আমরাতো ভয়ে অস্থির,কি না কি করে।পিছন থেকে আমার এক বন্ধু আওয়াজ দিলো,"মামুইন্না আজ কেল্লা ফতে।"তখন সুনামী যেসব কথাগুলো বলেছিলো সেগুলো আজও আমার কানে ভাসে।কথাগুলো ছিলো এমন,"দেখো মামুন,তোমাকে আমার অনেক পছন্দ হয়।আমি তোমাকে লাভ করি।এখন কি করবা তোমার ব্যাপার।যদি না চাও এই ব্যাপারটা তোমার বাবা মা জানুক তবে তারাতারি মতামত জানাইবা।"

 

 

সেদিন ভয়ে,লজ্জায় আমাদের সেই বন্ধুটি পালিয়ে গেলো।পরীক্ষার দিনের আগ মহূর্ত পর্যন্ত আমরা তার মুখ দর্শন থেকে বঞ্চিত হইলাম।এই ঘটনা রাতারাতি সমস্ত স্কুলে ছড়িয়ে পরলো।এমনকি আশে পাশের স্কুলের পোলাপানও এই ঘটনা নিয়ে মজা নেয়া শুরু করলো।আমরা মাঝে মাঝে মামুনদের বাড়িতে যেয়ে তাকে স্বান্তনা দিয়ে আসতাম।

 

আমরা যখন এইচ এস সি পরীক্ষা দেবো তখন জানতে পারলাম প্রবাসী এক ছেলের সাথে সুনামীর বিয়ে হয়ে গেছে।তারও পরে সুনামীর এক বান্ধবীর বদৌলতে জানতে পেরেছিলাম সেদিনের সেই ঘটনা ছিলো নিছকই দুষ্টামির।সুনামী তার বান্ধবীদের সাথে বাজী ধরে এমনটা করেছিলো।