আমি আর আমার বন্ধুরা ৪ (রম্য)

 

 

[আমার এবং আমার বন্ধুদের বিভিন্ন মজার সব ঘটনা নিয়ে নতুন একটা সিরিজ লিখার পরিকল্পনা আমার অনেক দিন যাবৎ ছিলো।তাই সেই সব ঘটনার আলোকে লিখতে শুরু করলাম আমি আর আমার বন্ধুরা

নামক এই সিরিজ।এর সকল ঘটনা ৮৮% সত্য এবং গ্যারান্টেড।

যদি দূর্ভাগ্যবশত কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাথে মিল পাওয়া যায় অথবা মিলে যায় তাহলে দয়াকরে আমার প্রতি short code এ MC, BC ,SMC বা কামিনা,আবুইল্যা,বোকচোদ,মুড়ি খা ইত্যাদি word use করবেন না। ]

 

 

আমার এক কাজিন।সম্পর্কে আমার ফুফাতো ভাই। ওর নাম ছিলো জনি। জনি আর আমি প্রায় সমবয়েসি ছিলাম তাই ওর সাথে আমার চরম একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক।

যে ঘটনাটা বলছি সেটা আজ থেকে প্রায় দশ বারো বছর আগের ঘটনা।তখন ওরা রাজাবাজারে থাকতো।আমি প্রায় সময়ই ওদের বাসায় বেড়াতে যেতাম।তখনই একটা সমস্যা লক্ষ্য করতাম।

 

প্রবলেমটা ছিলো এরকম, 

জনিদের পাশের ফ্ল্যাটে ওদের বাড়িওয়ালা থাকতো।ভীষন সৌখিন একটা পরিবার।বাড়িওয়ালার মেয়ের একটা কুকুর বিলেতি কুকুর ছিলো। না সমস্যাটা ঐখানে ছিলো না।সমস্যাটা ছিলো ঐ কুকুরটার নামও ছিলো জনি।দুই জনির মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব থাকলেও মাঝে মাঝে ঝগরা হতো।তার ফলস্রুতিতে আমার ভাই জনি একবার তার বন্ধু জনির কামড় খেয়ে ইনজেশান নিয়েছিলো।

আমরা কেউ যখন দড়জায় দাড়িয়ে আমাদের জনিকে ডাকতাম তখন পাশের ফ্ল্যাট থেকে বাড়ীওয়ালার মেয়ের কুকুর ঘেউ ঘেউ করে জবাব দিতো আর পাশের ফ্ল্যাট এর কেউ যখন তাদের কুকুরকে আদর করে বাইরে থেকে জনি বলে ডাকতো তখন আমাদের জনি সজোরে "কে" বলে দড়জা খুলে আহাম্মক বনে যেতো।

 

 

আরেকটি ঘটনা বলি।

জনি তখন আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছিলো।বাসার সামনের রাস্তায় আমরা দুজন ক্রিকেট খেলছিলাম।তখন জনি ছয় মারতে পারতো কিন্তু আমি পার‌তাম না।খেলার মাঝে জনি ছয় মেরে বলটাকে কার্নিশে উঠি দিলো।জনি তখন আমাকে বল আনার জন্য বার বার অনুরোধ করতে লাগলো।আমি চরম অসম্মতি জানাইলাম।কারন আমি ছক্কা মারতে পারি না।আর ও ছক্কা হাকাতে পারে বলে বল কার্নিশে উঠাবে?এই অপমান গেলার মত পোলা আমি না।শেষে বাধ্য হয়ে ওকে মেইন গেট বেয়ে উঠতে হলো।তখনই ঘটলো আজিব এক কান্ড।গেটের উপরে চোর নিধনের সেই সারি সারি ছুরির ফলার ন্যায় বস্তু দাড় করানো ছিলো।বেচারি আমার ভাই পা ফসকে সেই ফলার মধ্যে বসে পরলো।আর কি চিৎকারআমি ঘটনা বেগতিক দেখে পাশেই আমাদের ফ্যাক্টরী থেকে শ্রমিকদের ডেকে আনলাম।তারা যত্ন সহকারে ওকে ধরে নিচে নামিয়ে আনলো।ততক্ষনে আমি পুরা এলাকা এক কইরা ফেলছি।(মোটামুটি আমরা সব আত্তীয় একই এলাকার বাসীন্দা ছিলাম)

 

ধরাধরি করে জনিকে আমিন ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হলো।ডাক্তার বললেন অনেক খানি কেটে গেছে সিলাইতে হইবেশুইনা জনির মুখ পাংশু বর্ন ধারন করলো।সবার সম্মতি ক্রমে যেই কথা সেই কাজ।ওকে উপর করে প্যান্ট খুলে তিনজন ওরে জাইত্যা ধরলো।তারপর ডাক্তার সিলাইতে লাগলো।আমি দাড়াইয়া সেই করুন পরিস্থিতি উপভোগ করতে লাগলাম।আর আমার ভাই ডাক্তারের পায়ের ফাক দিয়া সকরুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে উু আ করতে লাগলো আমি হাসিব না কাঁদিবো এই কনফিউশনে কোন উপায়ান্তো না দেখিয়া কাটিয়া পরিলাম

পরে যখন ওকে বাসায় নিয়ে আসা হলো তখন বিছানায় ওকে উপুর কইরা শোয়াইয়া সেই ক্ষত জায়গায় বাতাস করিতে লাগিলাম আর বলিলা,"আর ছক্কা মারবি?)

 

অতঃপর ক্রিকেট নামক খেলায় তাহার ছক্কা হাকানো বন্ধ হইলেও প্রেম নামক বিষয়ে সে সমানে ছক্কা হাকাইতে মনযোগ দিলো।আমি আজ অবধি তাহার তেরোটি প্রেমের সন্ধান পেয়েছি যার প্রায় প্রত্যেকটিই ছিলো অসম্ভর সিরিয়াস টাইপের।কন্যা রাশি হওয়াতে সে সহজে মাইয়া পাইয়া যাইতো আর আমি আক্ষেপ করতাম কেন যে আমার কন্যা রাশিঝইলো না?যদিও স হজেই তার সেই সিরিয়াস টাইপের প্রেমে বিরহ বিচ্ছেদ ঘটিতো।

 

একবার এমনি সে এক রমনীর সহিত সিরিয়াস প্রেমে ধোকা খাইলো।প্রেমর ধাক্কা সইতে না পরে আমার বেচারি ভাই একপাতা ঘুমের ট্যাবলেটের নয়টা গিলিয়া ফেলিলো। যে একটা ট্যাবলেট উচ্ছিষ্ট ছিলো সেটা দেখে আমার ফুপি বুঝয়া পাইলেন ছেলে তাহার কেন ঘুমাইতেছে?

খবর পাইয়া আমি দ্রুত হসপিটালে ছুটিয়া গেলাম।ততক্ষনে তাহার গলায় পিভিসি পাইপ ঢুকাইয়া ওয়াশ করানো হইছে।যাইয়া দেখি সে পইট্টা ঘুমাই্তাছে।পাশে আমার ফুফু কাঁদিতেছে।আমারা প্রিয় কাজিনের এহেন অবস্থা সহ্য করতে না পরে আমি কেবিনের বারান্দায় যাইয়া দুই ফোটা অস্রু বিসর্জন দিলামআর পকেট থাইকা মোবাইল বাইর কইরা ঐ মাইয়ারে কন্টাক্ট থাইকা বাইর কাইরা ফোন লাগাইয়া দে ধুমারছে বয়ান দিতে লাগলাম।মাইয়ারে শাশাইয়া দিলাম যে আমার ভাইয়ের কিছু হইলে ওরে আর ওর নিউ বয়ফ্রেন্ডরে আমি ছারমু নামাইয়া ঘটনার কিছু না বুঝিয়া কাঁদিতে লাগিলো।

 

আমি এহেন কার্য সম্পাদন কইরা বীর দর্পে কেবিনে ঢুকতেই দেখি আমার ভাই চোখ মেলিয়া তাকাইছে।কিন্তু গলা দিয়া পিভিসি পাইপ ঢোকানোর ফলে বেচারির আওয়াজ শুনা যাইতেছে না।আমি তারে খুলিয়া বলিলাম যে আমি মেয়েকে কেমন পেদানি দিছিভাই আমার অগ্নি চোখে আমার পিঠে একটা চড় বাসাই দিলো।কিন্তু বলিতে চেষ্টা করিয়া কিছুই বলিতে পারিলো না।আমার পিঠে তাহার চড় পাইয়া বুঝিলাম আমি দারুন একটা সাহসিকতার কাজ কর্সি আর ভাই আমার খুশি হইয়া পুরষ্কৃত কর্ছে।

 

ঠিক তিনদিন পরে জনি আমার বাসায় আইসা হাজির।আমার ঘরে ঢুইকাই ক্ষিপ্তভাবে আমাকে মাইর শুরু করলোকোনমতে ওরে থামাইয়া জিগাইলাম কি হইছে তোর?

আমারে আবার জাইত্যা ধইরা বেচারি যাহা কইছে তা এখনও আমার কানে বাজে।

ঘটনা হইলো মাঝখানে ও অন্য এক মাইয়ার সাথে প্রেম প্রেম খেলা শুরু করছিলো।কিছুদিন পরে জানতে পারে মাইয়ার বয়ফ্রেন্ড আছে।এইকথা শুনিয়া টিকতে না পাইরা মাইয়ারে দেহানের লাইগা রিলেক্সিন খাইয়া ট্রাইল মারছিলো।কিন্তু এতখানি ধরবো সেইটা ও নিজেও কল্পনা করে নাই।

আর এদিকে ঘটনার কিছু না বুইঝা আমি ওর ওরিজিনাল লাইলিরে উল্টা পাল্টা বলছি।আর লাইলি ওর উপ্রে বিলা হইয়া কইছে যে হের লগে সম্পর্ক রাখতে হইলে জানের জান ভাই (আমাকে) ছারতে হইবে।

ভাই আমার কি করবো বুঝতে না পাইরা আমার কাছে ছুটিয়া আইসা আমারে উত্তমমধ্যমের মাধ্যমে সমাধান বাইর কর্তে চাইলো।শেষে বেচারীর সেই প্রেমও বিসর্জন দিতে হইলো আমার কথা চিন্তা কইরা।

 

(পোষ্ট বড় হয়ে যায় বিধায় জনিকে (আমার কাজিন) নিয়ে সব ঘটনা দেয়া হলো না।পরবর্তীতে ওকে নিয়ে আরও অনেক মজার ঘটনা লিখবো)