আমি আর আমার বন্ধুরা ৭ (রম্য) - গরু তুই মানুষ হইলি না!!!

 

 

 

আমার এবং আমার বন্ধুদের বিভিন্ন মজার সব ঘটনা নিয়ে নতুন একটা সিরিজ লিখার পরিকল্পনা আমার অনেক দিন যাবৎ ছিলো।তাই সেই সব ঘটনার আলোকে লিখতে শুরু করলাম আমি আর আমার বন্ধুরা নামক এই সিরিজ।এর সকল ঘটনা ৮৮% সত্য এবং গ্যারান্টেড। যদি দূর্ভাগ্যবশত কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাথে মিল পাওয়া যায় অথবা মিলে যায় তাহলে দয়াকরে আমার প্রতি short code এ MC, BC ,SMC বা কামিনা,আবুইল্যা,বোকচোদ,মুড়ি খা ইত্যাদি word use করবেন না

 

 

 

অনেক দিন পরে “আমি আর আমার বন্ধুরা” সিরিজে হাত দিলাম। এই সিরিজটা আমার কাছে বরাবরের মত খুব প্রিয়, কারন এর সকল ঘটনাই সত্য। যারা সাধারনত গল্প লিখেন তাদের কল্পনা শক্তি ভালো হয় এবং তারা কল্পনার মধ্যেই বাস করতে থাকেন। সেই কল্পনা থেকে অবসর নেয়ার জন্য এই সত্য সিরিজটা দারুন উপকারী। “আমি আর আমার বন্ধুরা-৬” এ আমি আমার দেবদাস হওয়ার কথা লিখেছিলাম, পরের পর্বে চন্দ্রমুখীর কথা লিখবো বলেছিলাম।কিন্তু কুরবানির ঈদের জন্যে সেটা “আমি আর আমার বন্ধুরা-৮” এ লিখা হবে, সাথে চুনিলাল এবং আরও কিছু বেখাপ্পা গল্পও থাকবে। তবে এই পর্বটা শুধুই কুরবানির ঈদের স্মৃতি নিয়ে। 

 

 

প্রায় তিন থেকে চার বছর আগের কথা। আমরা সাধারনত রোজার ঈদ ঢাকায় এবং কুরবানির ঈদ গ্রামের বাড়িতে করতাম। সব আত্মীয় স্বজনে গ্রামের বাড়িতে হুলস্থুল কান্ড। বছরে দুই বার গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হতো, একবার জ্যৈষ্ঠ মাসে আমের সিজিনে, আর একবার কুরবানির ঈদে। অবাক করা ব্যাপার হলো আমরা এত আত্মিয় স্বজন যে, বিশাল সাইজের দুইটি গরু মাত্র একসপ্তাহে চেটেপুটে খেয়ে হাড্ডি ফেলে ঢাকায় চলে আসি। 

 

 

সেই বছর তখনো গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয়নি, আমার কি যেন একটা এক্সাম ছিল। আব্বু আর আমি ছাড়া মোটামুটি সবাই গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। আমরা মোটামুটি সব আত্মিয় স্বজন ঢাকায় একই এলাকায় থাকি। একদিন সকালে শুনলাম যে ছোট ফুপা গরু কিনে নিয়ে আসছেন। আমি খুব উৎসাহ নিয়ে সকাল সকাল ফুপুদের বাসার সামনে যেয়ে দেখি একটা রগা পটকা গরু হাসছে।গরুকে সাধারনত কাঁদতে দেখা যায়, কিন্তু গরু কিভাবে হাসে তা কেউ জানে না। সাধারনত বিরিয়ানির দোকানের কিংবা মাংশের দোকানের সাইন বোর্ডে আর্টিস্টের নিপুন হাতের শিল্পকর্মে গরুকে হাসতে দেখা যায়। একপাশে গরু আর একপাশে একটা খাসি হাসছে, মাঝে কিছু মুরগি বাচ্চা নিয়ে ডানা মেলে নাচতেছে, পুরাই সুখী সাইনবোর্ড।  যাইহোক, আমার কাছে সেদিন সেই গরুটিকে সুখী গরু মনে হয়েছিল, কিন্তু এই ব্যাটা গরু যে এমন বিশ্রি একটা কান্ড করবে সেটা তাকে দেখে কেউ বিশ্বাস করতে পারতো না, ১০০ টাকা বাজি ধরতে পারি ( গরু এখন জান্নাতে গায়ে বাতাস লাগায়া ঘুরতেছে)।  

 

 

যাইহোক, আমি সকাল সকাল ফুপুর বাসার সামনে যেয়ে দাড়াইলাম গরু দেখার জন্য। দেখি পাশেই ফুপাত ভাই আর ফুপাত বোন দাঁড়িয়ে আছে। ফুপাত বোন আবার আমার থেকে সামান্য বয়সে ছোট। তার হাবাভাব সন্দেহজনক, কারন ছোট বেলা থেকেই মেয়েরা আমাকে দেখলে গর্তে পরে। আমি সেই গর্ত থেকে টেনে তুলি না। একবার একজনকে টেনে তুলতে যেয়ে নিজেই গর্তে পড়লাম, আর সে মেয়ে গর্ত থেকে উঠে গা ঝাড়া দিয়ে চলে গেলো, আমার দিকের ফিরেও তাকাল না। সেই কাহিনী তো সবাই মোটামুটি জানে, এই সিরিজের সাত নম্বরেই আছে। মেয়েদের থেকে আমি সেই জন্যে একটু দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করি। আমি গরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম, কানে চুলকে আদর করে দিলাম। একটি জিনিস লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, আমাদের দেশে কুরবানির ঈদ সাধারনত শীতকালে হয়। তো তখন শীত শীত লাগছিল। আমরা সবাই আগ্রহ নিয়ে গরু দেখছি। হঠাত বেটা বেয়াক্কেল গরু তার এক হাত লম্বা গোপনাস্র ( ইহা অস্র নহে অঙ্গ ) বের করে প্রায় একমিনিট পর্যন্ত শো ডাউন করলো। ইহা দেখিয়া আমি পুরাই আক্কেল গুড়ুম। আশেপাশে কি হইতেছে কে জানে, আমি যখনি আমার ফুপাত বোনের দিকে তাকাইলাম, বেচারি লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।  পরক্ষনেই দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেল। কি লজ্জা! কি লজ্জা!  গরু তুই মানুষ হইলি না। 

 

 

আমার ছোট ফুপ্পির ছেলে ইমন। সে আমার দারুন ভক্ত। হুমায়ুন আহমেদের হিমু সিরিজে যেমন হিমুর বাদল নামের এক কাজিন আছে যে কিনা হিমুর অন্ধভক্ত, ইমন হলো আমার সেই রকম অন্ধভক্ত।  মানুষ ৮ বিষয়ে লেটার পেয়ে রেকর্ড করে, ইমন ক্লাস এইটে ৮ বিষয়ে ফেইল করে রেকর্ড করেছিল।  আমার আর ইমনের অদ্ভুত সব কান্ড নিয়ে একটা সিরিজ লেখার ভবিষ্যত পরিকল্পনা আছে আমার। যাইহোক, একবার ঈদের পরে গ্রামের বাড়ি থেকে আমরা বাসায় আসছি। ইমন এসে আমাকে ধরলো একটা গল্প শোনাবে বলে। বলেই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল। গল্পটা হচ্ছে এরকম-

ছোট ফুপা গরু কিনতে হাটে গেছে, সঙ্গে ইমনও গেছে। একসময় একটা পাগলা গরু ছুটে ওদের দিকে আসতে শুরু করলো। সবাই ছটাছুটি করছে, কিন্তু ফুপা পিছন থেকে গরু আসতে দেখেননি। গরু এসে ফুপার পশ্চৎদেশে প্রচন্ড বেগে আঘাত করলো, ফুপা গতির সূত্র মান্য করে শুন্যে উঠে গেলেন। শেষে তিনি একমাসের জন্য পশ্চাৎদেশের যন্ত্রনা নিয়ে শয্যাশয়ী হইলেন। গরু তুই মানুষ হইলি না।

 

ঈদে সব থেকে মজার ব্যাপার ঘটত গরু কিনে বাসায় ফিরবার সময়ে। অদ্ভুত কোন কারনে কুরবানির গরু তার সামনের গরুর পেছনে উঠে পড়তে ভালোবাসে। তাও এমন ভাবে উঠে যে সন্দেহ না করে পারা যায় না। আর আশেপাশে কোন মেয়ে থাকলে তো সেই ঘটনা আরো জমে উঠে।  গরু তুই মানুষ হইলি না। 

 

 

আমার এক বন্ধু আছে সোহান নামে। ছোট বেলা থেকে খুব ব্রিলয়ান্ট স্টুডেন্ট। চোখের অবস্থা বিশ্রি রকমের খারাপ। চশমা ছারা দুই ইঞ্চি সামনের বস্তু দেখতে পায় না।  ওর বাবার নাম সোলায়মান সাহেব, আমরা ডাকতাম সোলায়মান ভাই। ওর বাবা কুরবানির জন্য সব সময় গাভী কিনতেন। তার মতে গাভির মাংস নাকি অতি সুস্বাদু। প্রতি বছর ওর বাবা গাভী কিনে আনলে ও মুখ শুকনো করে বসে থাকতো, কারন ওর সাথে দেখা হলে আমরা বলতাম,”কিরে তোর বাবা না-কি তোর জন্য গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আসছে?” 

 

 

একবার কুরবানির ঈদে রোগা এক ইমাম সাহেব এসে সবাইকে নিয়ে গরু শোয়াইছে। দেখা গেলো ইমাম সাহেবের ছোরায় ধার কম। অর্ধেক জবেহ করার পরে গরু ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। আমি গরু ছেরে দিলাম দৌড়।পরে আবার টেনে হিঁচড়ে ধরে এনে কুরবানি দিল। আমি দূর থেকে শুধুই দেখলাম।

 

 

আমার এক বন্ধু ছিল উদয় নামে। তবে সমস্যা ছিল উদয় নামে কেউ তাকে চিনত না। কিন্তু গরু বললে সবাই একনামে চিনতে পারতো। মাঝেমাঝে উদয় বলে ডাকলে কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যেত না, কিন্তু গরু বলে ডাকলে সাথে সাথে বলতো, ‘কি?’ গরুকে আমরা যেই সামনে পাইতাম খোঁচা দিতাম নইলে কাতুকুতু দিতাম। কুবানীর ঈদের সময় সিগারেটের বিনিময়ে গরুকে বেচতাম মাঝে মাঝে। সূর্য প্রতিদিন সকালে উদিত হলেও গরু সময়ে অসময়ে উদিত হইত। একদিন আমি আর শাওন মিলে গরুকে ধরছি, একসময়ে ও হাত ঝাড়া দিলো। আমার কানে এসে লাগলো ওর কুনুই। আমি কান ধরে বসে পড়লাম, গরু ভো-দৌড়। কানের ব্যাথায় তিনদিন আমার জ্বর ছিল। মেজাজ খারাপ, একসপ্তাহ গরুকে খুঁজে পাই না। ভয়ে চুপচাপ বাসায় বসে থাকে। তখন আমাদের এলাকায় কুরবানীর গরুর হাট বসেছে, একদিন বিকেলে সব বন্ধুরা মিলে হাটে গেলাম। হঠাত দেখি সামনে গরু (উদয়)। আমার মেজাজ গেলো সপ্তমে উঠে। আমি রাগলেও কখনো কারো গায়ে হাত দেই না। গরুকে সামনে পেয়ে কলারে ধরলাম। শুরু করলাম মাইর। বন্ধুবান্ধব সবগুলা এসে আমাকে ধরে বুঝাইল,”নিরীহ প্রাণী মারতে নেই।“  আশে পাশে তাকিয়ে দেখি সবাই হাটের গরু ছেরে আমাদের চারপাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এমন কি গরুর বেপারীরা গরু ফেলে দৌড়ে এসেছে গণ্ডগোল দেখতে। পরে অবশ্য উদয়ের সাথে সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। অনেক দিন গরুর সাথে কোন যোগাযোগ ছিল না, কয়েকদিন আগে একটা স্ট্যাটাসে দিয়েছিলাম উদয় গরুকে মিস করি। সেই স্ট্যাটাসে এক ফ্রেন্ড জানাইলো গরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ছাত্র লিডার, তেমন ভালো ছাত্র না হলেও বাপ যার মুল্লুক তার টেকনিকে চান্স পাইয়া গেছে। গরু তুই মানুষ হইলি না।