আমি আর আমার বন্ধুরা - ৫ (রম্য)

 

 

[ আমার এবং আমার বন্ধুদের বিভিন্ন মজার সব ঘটনা নিয়ে নতুন একটা সিরিজ লিখার পরিকল্পনা আমার অনেক দিন যাবৎ ছিলো।তাই সেই সব ঘটনার আলোকে লিখতে শুরু করলাম আমি আর আমার বন্ধুরা নামক এই সিরিজ।এর সকল ঘটনা ৮৮% সত্য এবং গ্যারান্টেড।

যদি দূর্ভাগ্যবশত কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাথে মিল পাওয়া যায় অথবা মিলে যায় তাহলে দয়াকরে আমার প্রতি short code এ MC, BC ,SMC বা কামিনা,আবুইল্যা,বোকচোদ,মুড়ি খা ইত্যাদি word use করবেন না। ] 

 

 

আমরা সাত জন ফ্রেন্ড প্রতিদিন ক্লাস শেষে ধানমন্ডি ঝিগাতলার রাইফেলস স্কয়ারের অপসিটে নেসক্যাফে তে আড্ডা দিতাম। আমি আর মুন্না পড়তাম ড্যাফোডিলে ,_ ফাহাদ, রানা, রাব্বি আর পাপ্পু পড়ত বি আই এম এসেআর আমাদের মাঝে একমাত্র মেয়ে ফ্রেন্ড অরমিকা পড়ত ইউ ল্যাব এ। প্রতিদিন দেখা না হলে আমরা শান্তি পাইতাম না। দুপুরে ক্লাস শেষ করে রাত পর্যন্ত আড্ডা চলত আমাদের। আর প্রতিদিন রেষ্টুরেন্টের বিল দিতে হইত অরমিকা কে   বেচারি বন্ধুপাগল মেয়ে। সেই সুযগে আমরা ওর বাবার টাকা উশুল করতাম। আমার বাপ প্রতিদিন ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য আমার বাজেট বরাদ্দ দিয়েছিল ২০০ টাকা। বাসা থেকে ধানমন্ডি যেতে রিক্সা ভাড়া ৭০ টা আর এক প্যাকেট বেনসন ১০০ টাকা আর অন্যান্য বিল নিয়া দুপুরের আগেই ২০০ শেষ । দুপুরের পরে আমার একমাত্র ভরসা ছিল অরমিকা।  আমারা সবগুলা অরমিকার টাকায় নির্লজ্জের মত লাঞ্চ করতাম।   আর আমার বাসায় যাওয়ার সময় রিক্সায় করে ও আমাকে ওয়ারী পর্যন্ত নিয়ে যেত, পথে আমার সিগারেটের বিল ও অরমিকা দিত  , এমন কি ওয়ারী থেকে আমার বাসা পর্যন্ত রিক্সা ভাড়াও দিয়ে দিত। আমার খুবই ভাল ফ্রেন্ড , হয়ত কোনদিন ওকে ভুলব না। 

 

যাইহোক, একদিন নেসক্যাফেতে সবাই আসছি। হঠাৎ করেই অরমিকা বললো," দোস্ত জাহাজ বাড়ির অপসিটে একটা জ্যোতিষ বসে দেখছিস? কাল রাব্বির হাত দেখসে। চল তোর হাত দেখাবি"  ভবিষ্যত জানার বড়ই আকাঙ্খা আমার। আর জ্যোতিষের টাকা তো অরমিকা দিবে। সো আমার টেনশন কিসের?  যেই কথা সেই কাজ। হাটা ধরলাম অরমিকার পেছনে। কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে এলাম সেই ভবিষ্যত কথক জ্যোতিষ ভায়ার কাছে। দেখি জ্যোতিস ভায়া ছালা বিছায়া সামনে এক বাক্স আংটি লইয়া ভাবে বইসা আছে।

 

আমি সামনে বসে হাত বাড়ায়া দিলাম। সেই দিকে জ্যোতিস ভ্রাতা কোন ভ্রুক্ষেপই করলো না। আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে গড়গড়িয়ে বলতে শুরু করলো......... 

 

"আপনার জন্ম সোনার চামুচ মুখে নিয়া হইসে। জীবনে কষ্ট কি বুঝতে পারেন নাই। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সফল হয়েছেন। প্রেমের ভাগ্য সুখকর নয়। জীবনের প্রথম প্রেমিকা ফিরে আসবে আবার। ভবিষ্যতে আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। পরকীয়া আছে । আপু ওনাকে চোখে চোখে রাইখেন"

 

শ্লার হারামি জ্যোতিষের কথা শুইনা আমার চোখ কপালে। জীবনে ক্ষ্ট করিনাই ঠিক আছে কিন্তু প্রথম প্রেমিকা কেম্নে ফিরে আসবে? ঐটার ত বিয়া হইয়া গেসে।  আর পরকীয়া!!! এইটা আমি সবচেয়ে বেশী ঘৃনা করি। বাপ দাদা পরদাদা আমাকে যেই নীতি শিক্ষা দিসে আমি কিভাবে সব বিসর্জন দিয়া পরকিয়া করমু? কেম্নে?  আমার জীবন থাকতে এইটা সম্ভব না।  আর শালা বোকচোদ আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড কে বলে আমাকে চোখে চোখে রাখতে। কামিনা বড়ই চামবাজ জ্যোতিষ। ভাবসে ও আমার জি এফ 

 

আমি কড়া দৃষ্টিতে রাব্বির দিকে তাকাইলাম। রাব্বি আমার ভাব বুঝতে পাইরা কয়," দোস্ত হালায় আমারে একই কথা কইসে।" আমার পাশে দোস্ত রানা দাড়াইছিল। ছয় ফিট দুই ইঞ্চি আর বিগ সোর মত দেহ। রানা পাশে থাকলে আমারে কে ঠেকায়?

 

এইবার জ্যোতিষরে কইলাম ," মামা তুমি যে এখন লেকের পানিতে গোসল করবা এইটা কি তোমার রাশিতে লেখা আছে? ভালো কইরা দেখত তোমার ভবিষ্যত পাঁচ মিনিট।"   চায়া দেখি জ্যোতিষ বেটার মুঝ শুকায়া গেছে। একবার রানার দিকে তাকায়, একবার আমার দিকে তাকায়।  

 

এইবার অরমিকাকে বললাম," হাত দেখাইতে আনছস, দে এইবার ব্যাটারে টেকা দে" অরমিকা কয়, " আমি ওরে টাকা দেব না, ও সবাইকে একই কথা বলসে" এইবার আমার মুখ শুকায়া গেছে। আমার পকেটে টাকা নাই। অরমিকাও টাকা দিব না। শেষে রানার পকেট খুঁইজা একটা লাল দশটাকার জীর্ন নোট পাওয়া গেল। সেইটা জ্যোতিষরে দিয়া সাত জন মিল্যা জ্যোতিষের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করতে শুরু করলাম। 

 

আরেকদিনের ঘটনা বলি। তখনও সেই জ্যোতিষের কাহিনী নিয়ে আমরা হাসাহাসি করি। বিকালে আমাদের একটার পকেটেও টাকা নাই। বেনসন টাইনা টাকা শেষ কইরা গোল্ডলিফ দিয়া শেষ করলাম। অরমিকাও সিগারেট কিনতে টাকা দিব না। পড়লাম বিপদে। সিগারেটের জন্য হাহাকার। অরমিকাকে বললাম, "তুই টাকা দিবিনা তাতে কি হইসে? দেখ আমি কেম্নে টাকা আয় করি?"  

বইসা পড়লাম লেকের পাশে পুরাই জ্যোতিস স্টাইলে।  মুন্না চিল্লায় কয় আপুরা কে কে হাত দেখাইবেন?  ডাক শুইনা তিনটা সুন্দরী ললনা মজা নিতে কাছে আসছে। এদের মাঝের জন বলে ভাইয়া আমার হাত দেখেন।  মাইয়ার হাত ধরতে যামু, তখনই অরমিকা পেছন থেকে লাথি দিয়া কয়, "হারামি তোর হাত দেখা লাগবে না। সুন্দরী মাইয়া দেখলে হাত দেখতে মন্চায়? উঠ এখান থেকে।" 

সুন্দরীরা আমার এই অপমানে হাসতে হাসতে চলে গেল। যাই হোক সেদিন উপার্জন না হইলেও অরমিকা সিগারেটের টাকা দিসিল 

 

শেষের ঘটনাটা ইউ কে তে। অ্যাস্ট্রলজিতে আমার ভালোই ইনটারেষ্ট ছিল। হাত দেখে অনেক কিছুই সঠিক বলে দিতে পারি।  সব জ্যোতিষ বাম হাত দেখলেও আমি ডান হাত দেখি  আমি আর আনিলা কাজ করতাম একটা এন জি ও তে। ব্রাডফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে একসাথেই পড়তাম।খুব ভালো ফ্রেন্ড ছিল । আনিলা বাই বোর্ন বৃটিশ হইলেও কাশ্মীরী ফ্যামিলির মেয়ে। প্রায় সময়ই এসে হাত বাড়িয়ে বলতো," হোয়েন আই উইল গেট ম্যারিড?"  প্রতিদিন এক কথা বলতে ভালো লাগে? একদিন রাগ কইরা বললাম, " থারটি মোর ইয়ারস লেটার" 

 

এমন আরো অনেক মজার ঘটনা আছে আমার জ্যোতিষ বিদ্যা নিয়ে। পোষ্ট বেশী বড় হয়ে যায়। অন্য একদিন আবার লিখব এগুলো নিয়ে