আমি আর আমার বন্ধুরা - ৬ (রম্য)

 

 

[ আমার এবং আমার বন্ধুদের বিভিন্ন মজার সব ঘটনা নিয়ে নতুন একটা সিরিজ লিখার পরিকল্পনা আমার অনেক দিন যাবৎ ছিলো।তাই সেই সব ঘটনার আলোকে লিখতে শুরু করলাম আমি আর আমার বন্ধুরা

নামক এই সিরিজ।এর সকল ঘটনা ৮৮% সত্য এবং গ্যারান্টেড।

যদি দূর্ভাগ্যবশত কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাথে মিল পাওয়া যায় অথবা মিলে যায় তাহলে দয়াকরে আমার প্রতি short code এ MC, BC ,SMC বা কামিনা,আবুইল্যা,বোকচোদ,মুড়ি খা ইত্যাদি word use করবেন না। ] 

 

 

 

এই সিরিজের প্রথম পর্বেই বলেছিলাম, আমার জীবনে সিরিয়াস একটা প্রেম এসেছিল।   আমাকে বানের জলে ভাসিয়ে কুলাঙ্গার বানিয়ে রেখে চলে গিয়েছিল।  এই পর্বে সেই কলঙ্কিত প্রেমের কিছু স্মৃতি আর সেই পেত্নীর কথা বলবো। 

 

যতই পেত্নী বলি না কেন, সে ছিল অসম্ভব সুন্দরী । আমি এখনও ওর মত সুন্দরী মেয়ে খুব কম দেখেছি। হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন সুন্দরী মেয়েরা নাকি নিজের প্রেমেই পড়ে। হয়ত সেই সূত্র আমার ভালুবাসার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।  তার সাথে আমার সাক্ষ্য দেখা হয়েছিল মাত্র তিন দিন । একই এলাকায় থাকতো তাই প্রতিদিন তাকে আর আমার সাবেক শ্বাশুরীকে একসাথে স্কুলে যাইতে দেখতাম। মাইয়ার মা প্রচন্ড বদরাগী আর কনজারভেটিভ ছিল। মেয়েকে কড়া নজরে রাখতো । মাঝে মাঝেই ফোনে কথা হতো। মেয়ে স্কুলে পড়ত আর আমি কলেজে সেকন্ড ইয়ারে।  নিজের ফোন ছিলনা বিধায় পাশের বাসার এক আন্টীর মোবাইল থেকে মিসকল দিত। এমনি একদিন আমার মোবাইলে মিসকল আসলো.....

 

সাথেসাথেই কলব্যাক করলাম। মাইয়া কথা কয় না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আমি জিগাইলাম কান্দো ক্যা?  মাইয়া আমারে কয় "তুমি আমারে ভালোবাসো না। পাশের বাসার আপু বললো তোমার কাজিনের সাথে নাকি তোমার রিলেশন আছে। তুমি আমার সাথে এমন অভিনয় করতে পারলা? "  

এরপর আমি মাইয়ারে যতই বুঝাই যে ওরে ছাড়া আমার কেউ নাই আমার পুরা দুনিয়া আন্ধার , কিন্তু বুঝে না কান্নাকাটির মাত্রা আরও বাড়াইয়া দিল। তুমি আমার আকাশ, বাতাশ, পাখি , নদী, পাহাড় এইবব কইয়াও বুঝাইতে পারলাম না। পড়লাম মুসিবতে। মাইয়া চার পাঁচদিন আমারে মিসকল দেয় না।  ওর বাপের নাম্বার জানতাম তয় টাকলু গাব্বার সিং কে ফোন দিয়া ওর কর্কশ ভাষায় হ্যালু শোনার কোন ইচ্ছা আমার ছিল না।  বুকের ভেতর তীব্র চাপা বিমর্ষ বেদনা শুরু হইলো। আর পারি না , আমি আর পারি না ।   

 

তখন আবার আমার বাসায় বেড়াতে আসছিল সদ্য ছ্যাকা খাওয়া কামিনা ফুফাত ভাই। হারামি শুইনা আমারে বুদ্ধি দিল হাত কাইট্টা রক্ত দিয়া চিঠি লিখতে।  শুইনা আমার চোখ কপালে।  অন্য কারও হাত কাটতে কইলে আমি নির্দিধায় কাইটা ফালাইতাম।  কিন্তু নিজের হাত কাঁটার মত সাহস আমার কোনকালেই ছিল না।  কামিনারে কইলাম অন্য কোন বুদ্ধি দে, এইটা আমার দ্বারা সম্ভব না।  শালা গিরগিটির বংশধর আমারে কয় মাইয়াগো বিশ্বাস পাওয়ার সর্বাধিক পরীক্ষীত উপায় এইটা, বিফলে মূল্য ফেরত।  

 

কি আর করার, হাতকেটে প্রেমিকার বিশ্বাস অর্জনের প্রস্তুতি স্বরূপ সুমনের ফার্মেসী তে যাইয়া ব্যান্ডেজ, তুলা, স্যাভলন, হাত কাটতে একটা নতুন ব্লেড কিনলাম। সে এক মহা আয়োজন।  আমার সেই ঐতিহাসীক মাহেন্দ্র ক্ষনের সাক্ষী থাকবে একমাত্র আমার ফুফাত ভাই।  

 

আমি সাধারণত মাছ খাই না। আম্মু কাঁটা বেছে দিলে মাছ খাওয়া হতো। সেদিন রাতে একাই তিনটা কই মাছ খেয়ে ফেলছি। শুনছি কই মাছ খেলে নাকি রক্ত বাড়ে।  

 

যাইহোক, খাওয়া দাওয়া শেষে ফুফাত ভাইকে নিয়ে আমার রুমে চলে আসলাম। ব্লেড খুইলা হাতে নিলাম। কইলজায় পানি নাই আমার। দুইবার হাতের সাথে ব্লেড ঠেকাইয়া সাহস পাইলাম না কাটতে। অসহায় দৃষ্টিতে তাকাইলাম ভাইয়ের দিকে।   ওয় কয়, " তুই পারবি না, দে আমি আমার হাত কাইটা রক্ত দেই।" বেচারা ছ্যাকা খায়া খালি হাত কাটতে চায় । আমি সিনেমার নায়কের স্টাইলে কইলাম, " না, এইটা কেম্নে হয়? আমার প্রেমিকারে আমি রক্ত দিয়া চিঠি দিমু। " 

 

অনেক চেষ্টার পরেও আমার সাহসে কুলাইলো না। কিসের কি হাত কাটা? হাতে শুধু একটা ব্যান্ডেজ পেঁচায়া পরের দিন মেয়ের টিফিনের সময়ে স্কুলে ঢুইকা মাঠের মধ্যে গাল ধইরা কইলাম , " তুমি আমারে বিশ্বাস করো না, আজকে হাত কাটছি তোমার জন্য, কালকে আমার গলা কাটা লাশ পাইবা, এইবার বিশ্বাস অবিশ্বাস তোমার ব্যাপার।"  স্কুলের পুলাপান চাইয়া রইছে। দুই একজন স্যারও তাকায়া আছে। এলাকায় স্কুল তাই আমারে পায় কেডায়? মাইয়া কাইন্দা অস্থির। তারপর কিছুদিন মাইয়া ঠিক ছিল, কিন্তু মাইয়া মানুষ কি আর ঠিক থাকতে পারে? আবার সন্দেহ শুরু করছে। 

 

 

;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;

 

 

এই ঘটনাটা প্রথম দিকের। তখন ঐ মেয়ের সাথে প্রথম ভাব বিনিময় চলতেছে। এলাকায় নতুন এসেছিল ওরা। একদিন বন্ধু সুলতানের দোতলা বাসার ছাদে ক্রিকেট খেলছিলাম। হঠাৎ বল যেয়ে রেলিং পার করে রাস্তায় পড়লো। মাথায় বড়সর টাকওয়ালা এক লোক বল হাতে নিয়ে বলতেছে এভাবে খেলা নাকি ঠিক না, রাস্তা ঘাটে মানুষের ক্ষতি হয়। সুলতান আবার একটু বেশি মাথা গরম করতো। প্রথমে সুন্দর ভাবে বললো , আঙ্কেল বলটা দিয়ে দেন আর হবে না। কে শুনে কার কথা, ঐ লোক দেলোয়ার হোসেন চাকডী এর মত ওয়াজ শুরু করলো। পাপিষ্ঠ সুলতান ওয়াজ সহ্য করতে না পাইরা কইলো, " ঐ টাকলু বল দিবি নাকি নিচে আইসা তোর বেল ফাটামু?"  বেচারা বল দিয়া চুপচাপ চলে গেলো। আমি সুলতানের কাহিনি দেইখা ইয়াহুর [=)) ] এই ইমর মত হাসতেছি  , পাশে থেইকা সোহেল কয়," নির্লজ্জের মত হাসতেছিস কেন? এইটা ঐ মাইয়ার বাপ, তোর হবু শ্বশুর। "

 

 

;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;

 

 

একবার মাইয়া গেল গ্রামের বাড়িতে। ঢাকায় আসার পরে ফোন দিয়া একদিন কয় পা মচকাইয়া গেছে।  তখন আবার আমি কলেজ লাইফ পার কইরা ভার্সিটিতে উঠি উঠি অবস্থা। হাতে প্রথম ইনকামের টাকা আসলো। হলমার্ক থেকে একটা ব্রেসলেট কিনলাম ওর জন্য। এরই মাঝে আমার সা্থে দেখা করতে চাইলো। বললো ৫ মিনিট। আমি কইলাম পাঁচ মিনিটই যথেষ্ঠ । আমার মাথায় ছিল ওর পা মচকে গেছে। আমি যাওয়ার সময় ডাক্তারের কাছ থেইকা ব্যাথার ঔষধ নিয়া গেলাম।  

 

যাইয়া দেখি মাইয়ার সাথে পাশের বাসার সেই আন্টীও আছে। আন্টী আমাকে দেইখা খুব প্রশংশা করলো।  আমার মত রাজপুত্র ছেলে নাকি সবার জুটে না. যাইহোক আন্টী বললো ," তোমরা নাকি এই এক বছরে মাত্র দুই দিন দেখা করছো?  আমি এখানে আছি তোমরা সাইডে যেয়ে কথা বলতে পারো। " আমিত পুরাই খুশি, মনে মনে গান গাই," একেলা পাইয়াছিরে শাম.... এই নিঠুর বনে , আজ পাশা খেলব রে শাম ..... " 

 

মাইয়া বজ্জাত। কয় এখন কথা বলার সময় নাই। আন্টীর সামনেই নাকি সব কইতে হবে। আর পারলাম কই? ব্রেসলেটের যে গিফট প্যাক ছিল সেই প্যাকে পাও ব্যাথার ঔষধও ছিল। সেইটা মাইয়ার হাতে দিতে চাইলাম । নিল না। পরে কি আর করা, আন্টীর হাতেই দিলাম। 

 

বাসায় যায়া আন্টী দিলো আমারে ফোন। আন্টী আমারে সেইদিন ফোনে যা কইছে সেইটা মনে হইলে এখনো আমার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা করে। আন্টী সেই প্যাকে ঔষধ দেইখা কয়, " বাবা তুমি আমাদের মেয়েরে কি করছো? জন্ম বিরতির পিল দিছ ক্যা?" 

 

 

সেই বারই শেষ দেখা ছিল। এর পরে তো মেয়ের বাবা মা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিলো অন্যখানে , আর আমি দেবদাশ হইয়া পার্বতীর আশা ছারিয়া চন্দ্রমুখির পানে সুধা লইবার জন্য ছুটিলাম । সেই কাহিনী থাকছে পরের পর্বে।